SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

ষষ্ঠ শ্রেণি (দাখিল) - স্বাস্থ্য সুরক্ষা - NCTB BOOK

এ অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে আমরা নিজেকে একটু ভিন্নভাবে খুঁজে পাব। এ অধ্যায়ে আমরা কী জানব বলো তো? আমরা এ অধ্যায়ে একটি ভ্রমণকাহিনি সম্পর্কে জানব। বলতে পারো এটা কিসের ভ্রমণ? এই ভ্রমণ বা যাত্ৰা হলো আমাদের নিজেদের পরিবর্তনের যাত্রা। একটু সহজ করে বলি- জন্মের সময় আমরা খুব ছোট ছিলাম। ধীরে ধীরে আমরা বসতে শিখেছি, হাঁটতে শিখেছি, দৌড়াতে শিখেছি, স্কুলে ভর্তি হয়েছি। পঞ্চম শ্রেণি শেষ করে এখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছি। এভাবেই আমরা শিশুকাল থেকে কিশোরকালে বা কৈশোরে চলে এসেছি। এটাকে বয়ঃসন্ধিকালও বলে। এই যে একটু একটু করে আমরা বড় হচ্ছি, এটা একটি যাত্রা। আমাদের একান্ত নিজস্ব যাত্রা। এ যাত্রায় আমাদের কত ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। এসবের কিছু শারীরিক, কিছু আবার মানসিক। এ অধ্যায়ে এই পরিবর্তন সম্পর্কে আমরা জানব। কীভাবে এই পরিবর্তনগুলোর মাঝে নিজেকে সুস্থ রাখা যায়

তা ভেবে বের করব। সেগুলো নিজ জীবনে চর্চা করব। এই যাত্রার বিষয়ে জানার সময় আমরা শ্রেণিতে অনেক কাজ করব। তাহলে চলো এবার শুরু করা যাক।

 

নিচের কমিক দুটি পড়ি

কমিক দুটি পড়ে কি আমরা নিজের সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছি? সজীব ও রীতার মতো আমাদেরও কি এমন হয়? তাদের মতো আমরাও কি নিজেদের মধ্যে এমন কোনো পরিবর্তন বুঝতে পারি? কেন এমন হচ্ছে? এই যে আমরা একটু একটু করে বড় হচ্ছি এটা এক ধরনের পরিবর্তন। যতদিন যাবে আমরা এভাবেই ধীরে ধীরে বড় হতে থাকবে। এখন আমরা যে সময়ের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি এ সময়টার নাম হলো বয়ঃসন্ধিকাল। শৈশব ও যৌবন এ দুইয়ের মাঝে এটি সেতুর মতো কাজ করে। নিচের সেতুর ছবিটি দেখলে এ বিষয়ে আরও পরিষ্কার ধারণা পাবে।

আমরা এখন যে বয়সটায় আছি, সেদিক থেকে আমরা কিশোর বা কিশোরী।

এ সময়টা জীবনের এমন একটি সময় যখন শরীরে ও মনে অনেক ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়। সজীব ও রীতাও আমাদের বয়সী একজন কিশোর ও কিশোরী। কমিক দুটি নিয়ে শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে আমরা শ্রেণিতে আলোচনা করেছি। নিচে বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন নিয়ে কিছু প্রশ্ন দেওয়া হলো। আমরা এ পরিবর্তন সম্পর্কে যা জানি তা প্রশ্নগুলোর নিচে দেওয়া ফাঁকা জায়গায় লিখে ফেলি। উত্তরগুলো সম্পূর্ণ আমাদের নিজস্ব; চাইলে কাউকে বলতে পারি, আবার নাও বলতে পারি। উত্তর লিখতে গিয়ে কিছু বোঝার প্রয়োজন হলে শিক্ষককে জিজ্ঞেস করব।

কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন সম্পর্কে আমার ধারণা

বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন সম্পর্কে আমি কী জানি?
 
 
 
আমার শরীরে কী ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করছি?
 
 
 
আমার মনে নতুন কী ভাবনা আসে?
 
 
 
এসব পরিবর্তনের কারণে আমার দৈনন্দিন জীবনে অভ্যাস বা আচরণের কী পরিবর্তন হয়েছে?
 
 
 

আমার কৈশোরের যত্ন কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন জীবনের একটি স্বাভাবিক বিষয়। এই পরিবর্তনের যাত্রার মধ্য দিয়ে প্রত্যেক মানুষকেই যেতে হয়। শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাদের মনে নানা প্রশ্ন জাগে। কী হচ্ছে আমার সঙ্গে? কেন এমন হচ্ছে? কার কাছে যাব? কী বলব? বললে আবার কেউ কিছু মনে করবে না। তো? কীভাবে সমস্যার সমাধান হবে? এসব নানা প্রশ্ন মনে আসে। এই প্রশ্নগুলোর সমাধান নিচের কেসগুলোর মাধ্যমে আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করব।

 

নিচের কেসগুলো পড়ি

কেস-১

দীপা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। সে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে নিয়মিত আসত। বরাবরই সে বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো ফল করত। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর থেকেই দেখা গেল প্রতি মাসেই সে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কয়েক দিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকে। এই সময়ে বাড়িতে অবস্থান করে। এ কারণে শ্রেণির কাজে অংশ নিতে পারে না। এতে করে তার পড়াশোনার মারাত্মক ক্ষতি হয়। একদিকে তার পড়াশোনার ক্ষতি অন্য দিকে জীবনের এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। কি করবে ভেবে পায় না। সারাক্ষণই সে মনমরা হয়ে থাকে। এ বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা বলতে সে লজ্জাবোধ করে। নানা ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব তার মনে ভর করে। বিদ্যালয়ে সহপাঠী, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী এমনকি মায়ের সঙ্গেও তেমন কথা বলে না। একা থাকতে চায়, সবার সামনে আসতে চায় না। এ বছর সাময়িক পরীক্ষাতে সে আশানুরূপ ফল করতে পারে নি। সে সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকে। নিজের জীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়েও সে চিন্তিত।

 

দীপার সমস্যাটি তো জানলাম। এবার নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিই।

দীপা বাড়িতে অবস্থান করার কারণ কী?
 
 
 
ঐ সময় বাড়িতে থাকতে দীপার কেমন লাগত?
 
 
 
দীপার মনের ভিতর কী চলছিল?
 
 
 
কী করলে দীপা নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হবে না বলে তোমার মনে হয়?
 
 
 

 

কেস-২

রানা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। সে নিয়মিত স্কুলে যায়। শিক্ষকের কথা মেনে চলে। বন্ধুরা তাকে ভালোবাসে। তার প্রতিবেশী, পরিবারের সবার কাছেই সে স্নেহের পাত্র। কিন্তু কিছু দিন থেকে সে কারও সঙ্গে খেলাধুলা করে না। স্কুলেও নিয়মিত যায় না। মাঝে মাঝে অস্থির হয়ে ওঠে। সে তার এই অস্থিরতার কারণ কাউকে খুলে বলতে পারে না। তার মা খেয়াল করলেন, সে তার ঘরে কাউকে আসতে দেয় না। সে নিজের কাপড় চোপড়ও কাউকে ধরতে দেয় না। হঠাৎ করেই রেগে যায়। কিছু বলতে গেলে সে কখনো সংকোচ বা লজ্জাবোধ করে। এমন পরিস্থিতিতে তার আশপাশে যারা থাকত তারাও ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। তার নিজের এমন অবস্থা নিয়ে সে নিজেই শঙ্কিত।

 

রানার সমস্যাটি জানলাম। এবার নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিই।

কেন সবাই রানাকে এতো পছন্দ করে?
 
 
কিছু দিন ধরে রানার মাঝে কী কী পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে?
 
 
রানার কিছু একটা বলতে সংকোচ বোধ করার কারণ কী হতে পারে?
 
 
কী করলে রানা নিজের অবস্থা নিয়ে শংক্ষিত হবে না বলে তোমার মনে হয়?
 
 

দীপা ও রানার ঘটনাগুলো আমরা পড়লাম। আমাদের মতো করে উত্তরও লিখলাম। শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে আমাদের বয়ঃসন্ধিকালের ওপর কার্টুন দেখাবেন। সেটি না পারলে নানা উৎস থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেবেন। এর পাশাপাশি এই বই থেকেও কিছু সহায়ক তথ্য জেনে নেওয়া যাক। এই তথ্যগুলো আমাদের কাজে লাগবে।

 

কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন বিষয়ে সহায়ক তথ্য ও ধারণ

বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন বয়ঃসন্ধিকাল আমাদের শরীর ও মনের পরিবর্তনের একটি পর্যায়। এটি বিকাশের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রত্যেক মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে বয়ঃসন্ধিকাল। মেয়েদের ৮ থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন দেখা যায়। ছেলেদের ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে এই পরিবর্তন দেখা দেয়। এ সময়ে শরীর ও মনে নানা ধরনের পরিবর্তন হতে শুরু করে।

বয়ঃসন্ধিকালে আসাদের মধ্যে দুই ধরনের পরিবর্তন হয়। যেমন:

১. শারীরিক পরিবর্তন

২. মানসিক পরিবর্তন

শারীরিক পরিবর্তন: বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের যে পরিবর্তন ঘটে, তাই শারীরিক পরিবর্তন। একটু খেয়াল: করলে বুঝতে পারব যে আমাদের মধ্যেও এধরনের কিছু পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। তবে এই পরিবর্তনগুলো সবার জন্য একই সময়ে এক রকমভাবে আসে না। এ বিষয়গুলোকে আমরা সহজভাবে গ্রহণ করব। এই সময়ের প্রধান শারীরিক পরিবর্তনগুলো হলো :

  • দূরুত উচ্চতা বাড়তে থাকে।
  • ওজন বাড়ে।
  • শরীর দৃঢ় হয়।
  •  শরীরের গঠন প্রাপ্তবয়স্কদের মতো হয়।
  • শরীরের নানা জায়গায় লোম গজায়। 
  •  ত্বক ও চুলে পরিবর্তন আসে।
  • মুখমণ্ডলে ব্রণ হতে পারে।
  • কন্ঠস্বরে পরিবর্তন হয়।

এ ছাড়া ছেলেদের ক্ষেত্রে আরও কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন:

  • গলার স্বর ভারী হয়।
  •  মুখে দাড়ি-গোঁফ গজাতে শুরু করে।
  • মাংসপেশি দৃঢ় হয়।
  •  বীর্যপাত হয়।

মেয়েদের ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। সেগুলো হলো: 

  •  শরীর ভারী হয় ও বিভিন্ন অংশের আকৃতি পরিবর্তন হয়।
  • মাংসপেশি সুগঠিত হয়।
  •  ঋতুস্রাব (মাসিক) শুরু হয়।

 

মানসিক পরিবর্তন: 

বয়ঃসন্ধিকালে মনে অনেক ধরনের প্রশ্ন, দ্বিধা, কৌতূহল ও অনুভূতির সৃষ্টি হয়। এতে মনের যে পরিবর্তন ঘটে তাই মানসিক পরিবর্তন।

  •  নিকটজনের মনোযোগ, যত্ন, ভালোবাসা পাওয়ার ইচ্ছা তীব্র হয়। 
  • একজন আলাদা মানুষ হিসেবে নিজের ব্যক্তিপরিচয়ের ধারণা তৈরি হয় ।
  • আবেগপ্রবণতা বাড়ে।
  •  কিশোর-কিশোরীদের পরস্পরের প্রতি কৌতূহল সৃষ্টি হয়।
  •  এ সময় মনের মধ্যে নানাধরনের দ্বিধারে ও অস্থিরতা কাজ করতে পারে।
  •  সামাজিক কর্মকাণ্ডে আগ্রহ ও সহযোগিতামূলক মনোভাব বাড়ে।
  •  এ সময়ে অনেকেই নিজের ব্যাপারে খুব সচেতন থাকে। মনে তীব্র আবেগ অনুভব হয়। বারবার অনুভূতির পরিবর্তন যেমন কখনো হাসিখুশি পরক্ষণেই আবার মন খারাপ হতে পারে। হয়তো কোনো দিন মন খুব ভালো আবার পরের দিন মেজাজ খুব খারাপ হতে পারে।

 

বয়ঃসন্ধিকাল সম্পৰ্কে প্ৰচলিত ভুল ধারণা এবং সঠিক তথ্য: বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়ের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। এসব পরিবর্তন সম্পর্কে আগে থেকে কোনো ধারণা না থাকায় তাদের মনে নানা প্রশ্ন জাগে। সঠিক তথ্যের অভাবে ভুল ধারণা তৈরি হয়। তাই এই ভুল ধারণা ও সঠিক তথ্যগুলো জানা দরকার।

মাসিক সম্পর্কে ভুল ধারণা 

সঠিক তথ্য 

এটা এক ধরনের রোগএটা শারীরবৃত্তীয় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া
এ সময়ে কোনো কাজ বা খেলাধুলা করা যাবে নাস্বাভাবিক কাজকর্ম ও খেলাধুলা করাতে কোনো সমস্যা নেই।
গোসল করা যাবে নানিয়মিত গোসল করতে হবে
বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না বাড়ির বাইরে যেতে কোনো অসুবিধা নেই। 
এ সময়ে টক, ঝাল, মাছ, মাংস, ডিম খাওয়া যাবে নানিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে

 

বীর্যপাত সম্পর্কে ভুল ধারণা 

সঠিক তথ্য 

বীর্যপাত একটি রোগ এটা শারীরবৃত্তীয় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া
যারা কুরুচিকর চিন্তা করে তাদেরই বীর্যপাত হয়। বয়ঃসন্ধিকালে সকল কিশোরদেরই বীর্যপাত হয়।
এটি শারীরিক দুর্বলতার কারণশারীরিক দুর্বলতার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই

বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের যত্ন ও পুষ্টি 

বয়ঃসন্ধিকালীন বিভিন্ন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকর থাকতে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের কিছু কাজ করতে হবে। যেমন:

  • নিয়মিত গোসল করা বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের শরীরে বেশি ঘাম হয়। নিয়মিত সাবান দিয়ে গোসল করলে জীবাণুমুক্ত থাকা যায়। এর পাশাপাশি নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা ও হাত পায়ের নখ ছোট রাখা দরকার। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পরিষ্কার করা দরকার। এছাড়া বাইরে থেকে বাসায় ফিরে হাত পা মুখ ধোয়া প্রয়োজন।
  • পরিষ্কার কাপড় চোপড় পরা সবসময়ই পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করা উচিত। স্কুল থেকে ফিরে দ্রুত স্কুলের পোশাক খুলে ফেলা উচিত। পোশাক ময়লা হলে অবশ্যই তা ধুয়ে পরা উচিত। এসব সাধারণ যন্ত্রের পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের শরীরের বিষয়ে কিছু বিশেষ যত্নও নেওয়া দরকার।
  • বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের শরীরের যত্ন : মাসিকের সময় সাধারণত পরিষ্কার কাপড়, তুলা বা স্যানিটারি ন্যাপকিন/প্যাড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে এগুলো ব্যবহারের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
  •  মাসিকের সময় সম্ভব হলে স্যানিটারি ন্যাপকিন, সম্ভব না হলে পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করা। 
  •  ব্যবহৃত কাপড় বা স্যানিটারি ন্যাপকিন দিনে ৩-৫ বার পরিবর্তন করা।
  •  ধোয়া কাপড় অবশ্যই রোদে, বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে শুকানো। কড়া রোদে শুকালে রোগজীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা কমে যায়। অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে, ঝোপঝাড় বা গাছে এই কাপড় শুকানো অস্বাস্থ্যকর। সেক্ষেত্রে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
  • মাসিক শেষ হলে কাপড়গুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে, শুকিয়ে, ভাঁজ করে প্লাস্টিক বা কাপড়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্য রাখা যায়। ব্যবহার শেষে কাগজে মুড়ে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে অথবা গর্ত করে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। কোনোভাবেই ব্যবহার করা কাপড় বা প্যাড ল্যাটিন বা চেন/নালায় ফেলা যাবে না।
  • অতিরিক্ত কাপড় বা প্যাড কাগজে মুড়ে স্কুল ব্যাগে রেখে দেওয়া যেতে পারে। হঠাৎ স্কুলে থাকাকালীন মাসিক শুরু হলে এটি সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • কারও কারও ক্ষেত্রে মাসিকের সময় তলপেটে ব্যথা হতে পারে। সেক্ষেত্রে তলপেটে ভ্রম পানির সেক দেওয়া যেতে পারে। তবে বেশি ব্যথা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে |

বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের শরীরের যত্নঃ  বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের শরীরে বীর্য উৎপাদন শুরু হয়। শরীরের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বীর্য কখনও আপনা-আপনি বেরিয়ে আসে। আমাদের সমাজে এ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার আছে। এ সব কুসংস্কারের ফলে অনেকের মধ্যে মানসিক চাপ তৈরি হয়। এটা নিয়ে ভয় পেলে বিভিন্ন মানসিক সমস্যাও তৈরি হতে পারে। কিন্তু এটি স্বাভাবিক বিষয়। এ জন্য নিয়মিত গোসল করা এবং শরীর পরিষ্কার রাখা দরকার।

 

বয়ঃসন্ধিকালে পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্যের অভ্যাস

সুস্থ শরীর ও স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন বয়সে সুষম খাদ্যের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন ভিন্ন হয়। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে ও মেয়েরা দ্রুত বেড়ে ওঠে। তারা পড়াশোনা, খেলাধুলা ও দৌড় ঝাঁপে মেতে থাকে। এ কারণেই তাদের বেশি শক্তির প্রয়োজন।

  •  বয়ঃসন্ধিকালের সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। পাশাপাশি সঠিক পরিমাণ ও পুষ্টিমানসম্পন্ন খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন।
  • কেউ যদি আগে থেকেই অপুষ্টিতে ভোগে, তাহলে এই সময় শারীরিক নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার বিশেষ করে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যেমন- কচুশাক, লালশাক বা কলিজা ইত্যাদি।
  • মাসিকের সময় টক খাবার খাওয়া যাবে না ধারণাটি ঠিক নয়। বরং লেবু, কমলা, আমলকী ও জলপাইয়ের মতো টক জাতীয় ফল এবং ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ অন্যান্য ফল খেতে হবে।
  • এ সময় বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

বয়ঃসন্ধিকালে মনের যা বয়ঃসন্ধিকালে মনের যত্নের জন্য সঠিক তথ্য জানা দরকার। এ সময় কিশোর-কিশোরীদের তীব্র আবেগ ও অনুভূতি হয়। এটি স্বাভাবিক। এ তথ্যটি তাদের অহেতুক ভয় কিংবা দুশ্চিন্তা দূর করবে। দায়িত্ব গ্রহণে আরবিশাসী করে তুলবে। ইতঃমধ্যে প্রথম অধ্যায়ে মন ভালো রাখার কিছু কৌশল আমরা শিখেছি। বয়ঃসন্ধিকালে মনের যন্ত্রেও সে কৌশলগুলো ব্যবহার করতে পারব। এছাড়াও হঠাৎ রেগে গেলে নিচের কয়েকটি কাজ করা যায় : 

  • ৩-৫ বার নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া ও ধীরে ধীরে ছেড়ে দেওয়া।
  •  ৫০-১ পর্যন্ত উল্টাভাবে গোনা।
  •  যে স্থানে রাগ হচ্ছে সে স্থান পরিবর্তন করা।
  •  বেশি পানি দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ফেলা।
  •  ছবি এঁকে অনুভূতির প্রকাশ করা।
  •  নির্ভরযোগ্য কারও বা বিশ্বস্ত কারোর সঙ্গে মনের কথা খুলে বলা

 

কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন সম্পর্কে আমার ধারণা ফিরে দেখি।

এই অধ্যায়ের প্রথম দিকে আমরা বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন সম্পর্কে আমার ধারণা' ছকটি পুরণ করেছিলাম। এরপর কমিক, কেস স্টাডি, কার্টুন, নানা তথা উৎস ও এই বই থেকে অনেক কিছু জেনেছি। এই নতুন ধারণাগুলো কাজে লাগিয়ে নিচের ছকটি আবার পূরণ করি।

বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন সম্পর্কে আমি কী জানি ? 
 
 
 
 
আমার শরীরের পরিবর্তন সম্পর্কে এখন যা জানি
 
 
 
 
আমার মনের নতুন ভাবনাগুলো সম্পর্কে এখন যা জানি
 
 
 
 

 

কৈশোরের যত্নে আমার পরিকল্পনা

উপরের বিষয়গুলো থেকে আমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি আসলে আমাদের জীবন হলো একটা ভ্রমণ কাহিনির মতো। নিজেকে তাই শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও ভালো রাখতে চেষ্টা করব। এ জন্য আমরা কী কী করতে পারি তার একটি পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলি। লক্ষ রাখব আমাদের পরিকল্পনায় যেন শারীরিক ও মানসিক দুটি বিষয়ই গুরুত্ব পায়। চাইলে এ কাজটি গল্প, ছড়া, বন্ধুর কাছে ব্যক্তিগত চিঠি আকারেও আমরা নিচের ছকে লিখতে পারি। এই ছকটি পুরণের ক্ষেত্রে শিক্ষকের পরামর্শ নিতে পারি। বয়ঃসন্ধিকাল সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখেন এমন কারও কাছ থেকেও সহায়তা নিতে পারি। পরিকল্পনা তৈরি করে শিক্ষককে দেখাব। তাঁর পরামর্শ নিয়ে পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত করব।

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

কৈশোরের সুস্বাস্থ্যের চর্চা

এই অধ্যায়ের কাজগুলোর মধ্য দিয়ে আমরা বয়ঃসন্ধিকালে বা কৈশোরে সুস্বাস্থ্যের উপায়গুলো পেয়ে গেছি। এখন চর্চা করার পালা। এই বছরের বাকি সময় জুড়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কাজগুলো করব। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ বা চর্চাগুলো ব্যক্তিগত ডায়েরি বা জার্নালে লিখব। নির্দিষ্ট সময় পরপর কাজের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করে শিক্ষককে দেখিয়ে নেব। ডায়েরি বা জার্নালে নিচের প্রশ্নগুলোর আলোকে লেখার চেষ্টা করব।

  • গত এক/দুই মাসে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী কোন কাজগুলো করেছি?
  •  কাজগুলো করতে কেমন লেগেছে?
  •  এই কাজগুলো আমাকে ভালো থাকতে কীভাবে সাহায্য করছে? (সুস্থ, পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ, উৎফুল্ল ও স্বতঃস্ফূর্ত বোধ করছি কি?)
  • কাজগুলো করতে গিয়ে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি কি? হয়ে থাকলে কীভাবে তা মোকাবিলা করেছি?
  • শিক্ষক বা পরিবারের কাছে কি আমার কোনো সাহায্য দরকার? সেগুলো কী?

মনে রাখব এটি শুধু এক বছরের বিষয় নয়, বরং পুরো কৈশোরের। এই বছরে আমরা সুস্বাস্থ্যের জন্য অভ্যাস গড়ে তুলব। সেটি আমাদের কৈশোরকাল জুড়ে সুস্বাস্থ্যের পথ দেখাবে। এই অধ্যায়ের সেশনগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। বয়ঃসন্ধিকালীন সুসাস্থ্যের পথের অভিযাত্রার পরিকল্পনা করতে পারার জন্য রইল অভিনন্দন। সামনের দিনগুলোতে সুস্বাস্থ্যের চর্চা বজায় রাখার জন্য শুভকামনা থাকল। 

 

আমার অগ্রগতি, আমার অর্জন

নিচের হুকগুলো শিক্ষক পূরণ করবেন। এর মাধ্যমে আমাদের অগ্রগতি সম্পর্কে শিক্ষক ধারণা দিবেন। উৎসাহ দেবেন। কীভাবে আরও ভাল করতে পারি সেই উপায় জানাবেন। শিখন কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে আমার কাজগুলোর মান অনুযায়ী নিম্নলিখিতভাবে স্টার (তারকা চিহ্ন) দিয়ে মূল্যায়ন করবেন।

খুব ভালো ★ ★ ★ ভালো - ★ ★ আরও ভালো করার সুযোগ আছে

 

Content added By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.